দীর্ঘদিন ধরে পানির বিল দিলেও আমরা পানি পাই না। অনেকে বাধ্য হয়ে লাইন (সংযোগ) ছেড়ে দিছে। পানি বিলসহ নাগরিক সেবার সব খরচ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেবা পায়নি মানুষ। এখনো একই অবস্থা! রাস্তাঘাট সবকিছুর অবস্থাই খারাপ। বাগেরহাট এখন একটা পরিত্যক্ত শহর হওয়ার উপক্রম। ছোট একটা শহর, কোনো একটা রাস্তাঘাট ঠিক নেই। চলতে জীবন বের হয়ে যায়। হাসপাতাল রোডের এমন অবস্থা, পথেই রোগীর অর্ধেক জীবন বের হয়ে যায়। এগুলো সংস্কার বা দেখার মতো কোনো একটা লোক বাগেরহাটে নেই।’
দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট পৌরসভার চলমান পানিসংকট, নানা অনিয়ম ও প্রাপ্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সোমবার দুপুরে পৌর কার্যালয়ের সমানে জড়ো হয়ে বাসিন্দারা ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের সময় পৌরসভার কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। এখানকার বাসিন্দারা মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত। সাত মাস হয়ে গেছে বিপ্লবের পর। এখন পর্যন্ত বাগেরহাটে সবাই রাজনীতিই করে চলেছে। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত বা উন্নয়নের জন্য সামান্য চিন্তা, খেয়াল কারও নেই। পৌরকর দিলেও সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এই শহরের নাগরিক বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা বোধ করেন বলে জানান বক্তারা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বাগেরহাটের সাধারণ সম্পাদক এস কে হাসিব, জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা জাহিদ হাসান পলাশ, বিএনপি নেতা শহিদুজ্জামান, পৌর বাসিন্দা মাহাবুব আলম কাজল, নাহিদুল ইসলাম, রুনা আক্তার, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আরিফুল ইসলাম সজীব প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত ১৫ বছরে বাগেরহাট পৌরসভায় কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। পৌর এলাকার রাস্তাঘাট বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে, নাগরিকেরা প্রয়োজনীয় মৌলিক সুবিধা পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত কর ও ট্যাক্স পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। এক দুঃশাসন চলেছে এত বছর ধরে। কেউ কথা বলতে পরত না। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ সব ধরনের খাত থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হতো। আবার অবৈধ লেনদেনও চলত।
এ সময় পৌরসভার বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সাবেক মেয়র ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এখনো কেন বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। এস কে হাসিব বলেন, ‘বাগেরহাট পৌরবাসী বঞ্চনার শিকার, দীর্ঘ অবহেলার শিকার। এই কর্তৃপক্ষ পৌরসভাকে একটি ভাগাড়ে পরিণত করেছে। বিগত ১৫ বছর আমরা দেখেছি, অন্যায়, দুর্বৃত্তায়ন, দুশাসনের চিত্র। আমরা দেখেছি, মানুষ পৌরসভায় যেতে ভয় পেত। তারা মনে করত এটি একটি অনিরাপদ জায়গা।
এখানে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে মানুষকে অপমান–অপদস্থ হতে হতো। ৫০০ টাকার পৌর কর ধার্য করা হয়েছিল ২৬ হাজার টাকা। এরপর জোর করে, পরিস্থিতির শিকার করে ২০, ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা নেওয়া হতো। এটা ছিল ওপেন সিক্রেট। এমন অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে সবাইকে। পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো নাগরিক সুবিধার বিষয়ে উদাসীন। নাগরিকেরা জেগে উঠছে, পৌরসভার মানুষের ন্যায্য অধিকার আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।’