
বাগেরহাট পৌরসভার রেকর্ডীয় ৫টি খাল দখল করে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। নাব্যতা হারানোপ্রবাহমান খালগুলো জোয়ারভাটা বাধাগ্রস্ত হওয়া, দখল ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় এখন মৃতপ্রায়।দখলমুক্ত ও পুনর্খনন করে পৌরবাসীর ভোগান্তি থেকে রক্ষার দাবি এলাকাবাসীর। এসব দায় স্বীকার করে পৌরকর্তৃপক্ষ বলছে, ৫টি খালের বিভিন্ন স্থান দখল করে ৫ শতাধিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে দখল মুক্ত করে পুনর্খনন করা হবে বলে জানান।
জানা গেছে, পনেরো দশমিক ৮৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ১৯৫৮ সালের পহেলা এপ্রিল যাত্রা (স্থাপিত) শুরু হয় বাগেরহাট পৌরসভার। সোয়া লাখের বেশি মানুষের বসবাস এই পৌরসভায়। প্রবল প্রমত্তা ভৈরব নদের তীর ঘেঁষা বাগেরহাট পৌরসভা। এপৌরসভায় নয়টি ওয়ার্ডে পাঁচটি রেকর্ডীয় খাল রয়েছে। এসব খাল দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌকা চলাচল করত।এখন তা ভরাট হয়ে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় অবৈধ দখলদাররা খাল দখল করে ইমারতসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেছে। এখন এগুলোকে খাল হিসেবে চেনার উপায় নেই।খালগুলোর মধ্যে হাড়িখালি খাল, হরিণখানা খাল, বাদিয়ার খাল, নাগেরবাজার খাল, ওয়াবদা খাল, বালিয়ার খাল।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খাল দখল করে বড় বড় পাকা ভবন তৈরি করেছে। যার ফলে বষার মৌসুম জুড়েই জলাবদ্ধতা থাকে। ওইসব এলাকার বাসিন্দারা বাসা ভাড়া দিয়ে পারে না। একবার বৃষ্টি হলে ১৫ দিন হাঁটু পানি থাকে। পানি নিষ্কাশন হওয়ার কোনো অবস্থা নেই।
শহরের বাসাবাটি এলাকার বিধান হালদার বলেন, ‘পৌরসভার ভেতর দিয়ে প্রবাহমান খালগুলো দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌকা চলাচল করত। খালে গোসল ও সাঁতার কাটা যেত। এখন এলাকায় মরে গেছে। খাল চেনার উপায় নেই। বর্ষা মৌসুম আসলে পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক এলাকায় অবৈধ দখলদাররা খাল দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব খালের সংস্কার হয় না।’ এসব খাল দখলমুক্ত করে খনন ও সংষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
খাদিজা আক্তার বলেন, ‘খালগুলো কোথাও দখল হওয়ার কারণে আবার কোথাও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় খালগুলো ভরাট হয়েছে খালগুলো ভরাট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব রেকর্ডীয় খালগুলো দখলমুক্ত করে পুনর্খনন ও সংস্কার করা প্রয়োজন।’
বাগেরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রিজভী বলেন, ‘বাগেরহাট পৌরসভায় সোয়া লাখ মানুষের বসবাস। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৫টি খাল রয়েছে। এরমধ্যে অনেকটাই অবৈধ দখলে। ৫ শতাধিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে খালগুলোর অবস্থা এতোটাই খারাপ যে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এ পাঁচটি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিলোমিটার। সিটিসিএফটি প্রকল্পের মাধ্যমে কোস্টাল টাউনের ভেতরে এই ৫টি খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগির দরপত্র আহ্বান করে পৌরসভার ৫টি খাল সংস্কার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে সাড়ে সাত কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হবে।’ এটি বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে প্রত্যাশা এই কর্মকর্তার।
তবে বাগেরহাট পৌরসভার প্রশাসক মো. ফকরুল হাসান পৌরসভার কোনো বিষয়ে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।