
শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই বাগেরহাট পৌরসভায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট শুরু হয়েছে। চাহিদার অর্ধের নিচে নেমে এসেছে পৌরসভার পানি সরবরাহ। আর যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তা–ও দুর্গন্ধযুক্ত। মাসের পর মাস ধরে চলা এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন পানিসংকটে নাকাল বাগেরহাট পৌরবাসী।
সমাধান চেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক বাসিন্দা জড়ো হয়েছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানে পৌর প্রশাসককে না পেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। দুই দিনের মধ্যে পানি সমস্যার সমাধান না হলে কঠোর কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
বাগেরহাট পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন আট লাখ গ্যালন পানি প্রয়োজন। সরবরাহ করা যাচ্ছে চার লাখ গ্যালনের কিছু বেশি। ঘাটতি থাকছে প্রায় অর্ধেক। শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে পানি সরবরাহে ঝামেলা হয়। ফলে সরবরাহ এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসে। পাশাপাশি পুরোনো সরবরাহ পাইপলাইনে কিছু স্থানে লিকেজ হয়ে নর্দমার (ড্রেন) সংস্পর্শে আসায় পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
বর্তমানে বাগেরহাট পৌরসভায় গ্রাহক রয়েছেন ৬ হাজার ৫৫০ জন। সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের পূর্ব সায়েড়া গ্রামের গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলে শহরের দশানী ও বাসাবাটি এলাকার দুটি ওভারহেড ট্যাংকে আনা হয়। সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা হয় পৌর এলাকায়।
শহরের হালদার পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা মাসুমা রুনা বলেন, ‘ছয় মাস ধরে পৌরবাসী পানির সমস্যায় ভুগছেন। আমরা নিয়মিত বিল দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু পানি পাই না। শহরে তো পুকুর-দিঘির মতো পানির বিকল্প কোনো উৎস নেই। রোজার মাসে কীভাবে চলব? পানির জন্য মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। পৌর কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে কেবল একে অন্যের ওপর দোষারোপ করে চলেছে। তবে আমরা কোথায় যাব?’
শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘লাইনের সংযোগ নেওয়ার পর থেকে কখনো ঠিকমতো পানি পাইনি। সপ্তাহে দুই-তিন দিন সরবরাহ বন্ধ থাকে। এ ছাড়া পানিতে রয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। বাধ্য হয়ে খাওয়ার ও রান্নার পানি কিনতে হয়।’
বাসাবাটি এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হাসান পলাশ বলেন, ‘আমরা আজ ঐক্যবদ্ধভাবে পানির সমস্যার কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তাঁরা আমাদের কথা শুনেছেন। দুই দিনের মধ্যে পানির সমস্যার সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
পৌরসভার বাসিন্দারা দ্রুত পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি গুণগত মান নিশ্চিত, সরবরাহ–ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, ‘বাগেরহাট পৌরবাসী পানির সমস্যায় আছেন শুনেছি। তাঁরা আমার কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।’