‘আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে (স্বামী) নিয়ে আসব। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় এ বক্তব্য দিয়েছেন পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না।

ভিডিওতে ১৭ মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে জামিনে ছাড়িয়ে আনবেন বলেও জানান স্ত্রী তামান্না শারমিন।

তিনি বলেন, ‘আমার জামাই গতকাল (শনিবার) রাতে গ্রেফতার হয়েছে, এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মামলা যখন আছে, গ্রেফতার হবেই। আপনারা যারা ভাবতেছেন, আর কোনো দিন বের হবে না, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা।’

প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এত দিন আমরা পলাতক ছিলাম, এখন তোমাদের পলাতক থাকার পালা শুরু। খেলা শুরু হবে এখন।’ তামান্নার এ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ঢাকার একটি শপিং সেন্টার থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার (১৬ মার্চ) ছোট সাজ্জাদকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় সাজ্জাদের ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নগরীর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়ায় সংঘটিত তাহসিন হত্যা মামলার আসামি ছোট সাজ্জাদ। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে একদল যুবক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তাহসিনকে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী- সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধে তাহসিন খুন হন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহসিন ছিলেন বাবলার অনুসারী।

‘বুড়ির নাতি’ নামে পরিচিত সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ।

গত ২৮ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দিয়েছিলেন সাজ্জাদ। এরপর ৩০ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরতে তথ্যদানকারী কিংবা সহায়তাকারীকে নগদ অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফ দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, তাকে নগরের অক্সিজেনে ধরে এনে পেটাব। প্রয়োজনে মরে যাব। কিন্তু হার মানব না। ওসিকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুকে ল্যাংটা করে পেটাবো’। এ ছাড়া পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওসি আরিফ চাঁদাবাজিসহ আমার সন্তান হত্যায় জড়িত। তাকে যাতে বদলি করা হয়। পরে এ ঘটনায় জিডি করেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান।

সবশেষ গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড়ে ছোট সাজ্জাদকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায় সে। সেদিন পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হন।

অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের এক তরুণ নেতার আশ্রয়ে চলে যান সাজ্জাদ। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ আছে। হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে তার নামে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসেই তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।

সাজ্জাদের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুরে। তার বাবার নাম মো. জামাল উদ্দিন।