ঢাকাশুক্রবার, ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রামপালে অবাধে চলছে ঘের দখল ও চাঁদাবাজির মাহা উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক,
মার্চ ১৪, ২০২৫ ১২:৫৫ অপরাহ্ণ
শেয়ার:
Link Copied!

বাগেরহাটের রামপালে চলছে মাছের দখল ও চাঁদাবাজির মহোৎসব। এলাকাভিত্তিক বাহিনী গড়ে তুলে দখল বাজি নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি চক্র। আর এর প্রতিবাদ করলেই হামলাসহ চালানো হচ্ছে নির্যাতনের স্টিম রোলার। তবে পুলিশ বলছে, ইতোমধ্যে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও আটক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি চাষের জন্য বিখ্যাত বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা। পরিবর্তিত পরিস্থিতে এই উপজেলায় ঘের দখল ও পাল্টা দখলের অভিযোগ উঠেছে। এই উপজেলার মল্লিকেরবেড় ও ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়ও থেমে নেই ঘের দখল ও চাঁদাবাজি। বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে কালিকাবাড়ী গ্রামে মাছ ভর্তি ঘের দখলের সাথে সাথে অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়েও চাঁদার দাবিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এই চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস কারো নেই। প্রতিবাদ করায় অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার পৈশাশিক কায়দায় হামলা করে অনেককে গুরুতর আহত করা হয়েছে। পুরুষ শূন্য অনেক বাড়িতে গিয়ে ঘর পোড়ানো, হামলা ভাঙচুরের, ভয় ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি ধামকি অভিযোগ রয়েছে এই চক্রের বিরুদ্ধে। সুবিধাভোগী এই চক্র ইতিমধ্যে কালিয়াকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে। অন্তঃসত্ত্বা নারী ও ছোট শিশুদের নিয়ে মায়েদের দিন কাটছে চরম আতঙ্কে।

ওই গ্রামের লেকামান হাওলাদের স্ত্রী মাকসুদা বেগম ও মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী শাহিদা বেগম জানান, ঘের দখলের প্রতিবাদ করায় তাদের বাড়ির পুরুষদের হুমকি দেয়া হয়েছে। তারা কেউ বাড়িতে থাকে না। গভীর রাতে একদল লোক গিয়ে তাদের কয়েকটি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

একই গ্রামের অন্তঃস্বত্তা স্বপ্না বেগম প্রথমে কোন কথা বলতেই রাজি হননি। পরে বলেন, তাদের বাড়িকে কোন পুরুষ মানুষ নেই। প্রতিদিন রাতে দল বেধে দা, লাঠি নিয়ে একদল লোক মহড়া দেয়। তারা বাড়ির ভিতর ঢুকে বিভিন্ন ভাবে গালিগালাজ ও হুমকীÑধামকী দেয়। এই অসুস্থ অবস্থায় চরম ভয়ে দিন কাটছে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই নারি।

নাইম হাওলাদের স্ত্রী বৃষ্টি বেগম বলেন, ছোট বাচ্চা নিয়ে নিয়ে ঘরের এক পাশে থাকেন। রাতে বেড়ার পাশে এসে ওরা দাঁড়িয়ে থাকে। ভয় ও আতঙ্ক দুটোই আছে। আলামিন শরিফের ছেলে মুদি দোকানদার রিয়োজ শরিফ জানান, চাঁদার দাবিতে তার দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ওরা। তার দোকানের ১০ লক্ষ টাকার মালামাল নষ্ট হওয়ার পথে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকা রামপাল উপজেলার কালিকা বাড়ি গ্রামের মাসুদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক ঘের দখলে প্রতিবাদ করায় তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় তিনি মামলা দায়ের করলেন ২নং আসামি মাইনুল ইসলাম হিরকসহ তিন আসামিকে আটক করে পুলিশ। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে দখলবাজ ওই চক্রটি। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা তাকে ও তার আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। তিনি চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

সম্প্রতি সংবাদ সংগ্রহে ওই এলাকায় গেলে প্লানের বাজার নদীতে ট্রলার পার হওয়ার সময় ১৫/২০ জন যুবককে লাঠি হাতে নদী পার হতে দেখা যায়। এসময় ওই গ্রুপের একজন মোবাইল বের করে ছবি তুলতে নিষেধ করে। পরে স্থানীয়দের কাছে তাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে কেউই মুখ খোলেনি। তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা যায়। এসব চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দ্রত সময়ে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি স্থানীয়দের।

রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মো. সেলিম রেজা বলেন, তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।